টিউবেকটমি
টিউবেকটমি কি?
মহিলাদের জন্মনিয়ন্ত্রণের স্থায়ী পদ্ধতিকে বলা হয় টিউবেকটমি । এই পদ্ধতিতে অপারেশনের সাহায্যে ডিম্ববাহী নালীর কিছু অংশ বেঁধে কেটে ফেলে দিয়ে বা নালীপথ ক্লিপ/রিং দিয়ে আটকিয়ে অথবা বিশ্বজুড়ে মহিলাদের স্থায়ী পদ্ধতি ‘টিউবাল-লাইগেশন’, ‘অপারেশন’, ‘মহিলা বন্ধ্যাকরণ’, বা ‘মিনিল্যাপ’ ইত্যাদি নামে পরিচিত । তবে বাংলাদেশে ‘লাইগেশন’ এবং ‘মহিলাদের অপারেশন’ নামে বহুল পরিচিত ।
টিউবেকটমি যেভাবে কাজ করে:
টিউবেকটমি অপারেশনে ডিম্ববাহী নালীর ধারাবাহিকতা বন্ধ করে দেয়া হয় বলে ডিম্বাশয় থেকে প্রস্ফুটিত ডিম্ব ডিম্ববাহী নালী দিয়ে জরায়ুতে আসতে পারে না এবং শুক্রকীটও ডিম্বের নিকট পৌঁছাতে পারে না । ডিম্বের সাথে শুক্রকীটের মিলন না হওয়ার ফলে গর্ভসঞ্চার হয় না।
কার্যকারিতা বা সফলতার হার:
টিউবেকটমি খুবই কার্যকরী একটি পদ্ধতি। অপারেশনের পর প্রথম বছরে গর্ভবতী হওয়ার সংখ্যা শতকরা ০.৫ জন অর্থাৎ প্রতি ২০০ জন গ্রহীতার মধ্যে ১ জন। ১০ বছরের মধ্যে শতকরা ১.৮ জন মহিলা গর্ভবতী হতে পারে, যা ৫৫ জনে ১ জন। কার্যকারিতা নির্ভর করে কিভাবে ডিম্ববাহী নালীপথ অর্থাৎ টিউব বন্ধ করা হলো তার ওপর। ল্যাপারোস্কোপিক টিউবেকটমির তুলনায় মিনিল্যাপ টিউবেকটমি’র সফলতার হার অনেক বেশি।
টিউবেকটমির সুবিধা:
- স্থায়ী পদ্ধতি
- খুবই নিরাপদ ও কার্যকর
- অপারেশনের সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকরী হয়
- ৩-৪ ঘন্টা পর বাড়ি চলে যাওয়া যায়
- দীর্ঘমেয়াদি কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া বা স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই
- প্রতিদিন কোনো পদ্ধতি খাবার বা ব্যবহারের ঝামেলা নেই
- যৌনক্ষমতা ও শারীরিক শক্তি কমে না, সহবাসে কোনো সমস্যা হয় না বরং পূর্বের মতোই অটুট থাকে
- প্রসবের পরপরই এবং সিজারিয়ান এর সময় করা যায় এবং সেক্ষেত্রে বুকের দুধের উপর প্রভাব ফেলে না
- প্রাথমিক খরচ বেশি হলেও পরবর্তী প্রজননকালে গর্ভনিরোধক বাবদ কোনো খরচ হয় না। ফলে গর্ভনিরোধক সামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী ভূমিকা রাখে।
টিউবেকটমির অসুবিধা:
- স্থায়ী পদ্ধতি বলে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে চিন্তা ভাবনার প্রয়োজন আছে। অপারেশন পরবর্তীকালে গ্রহীতা সন্তান চাইতে পারেন, এক্ষেত্রে পুনঃসংযোজন অপারেশনের প্রয়োজন হয়। এই অপারেশন খুবই জটিল, ব্যয়বহুল ও সহজপ্রাপ্য নয়। এই অপারেশনের সফলতার হার অনেক কম অর্থাৎ সফলতার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
- এটি একটি ছোট অপারেশন হলেও ঝুঁকির সম্ভাবনা আছে।
- অপারেশনের পর কয়েকদিন ব্যথা থাকতে পারে।
- প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তার ও সাহায্যকারীর প্রয়োজন হয়।
- নগন্যক্ষেত্রে গর্ভবতী হতে পারেন এবং সেক্ষেত্রে জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- যৌনরোগ বা এইডস প্রতিরোধ করে না।
টিউবেকটমি অপারেশনের নিরাপদ সময়:
সিজারিয়ান অপারেশনের সময়, স্বাভাবিক প্রসবের সময় পর, এমআর/গর্ভপাতের পর এবং ইন্টারভ্যাল সময়ে টিউবেকটমি অপারেশন করা হয়ে থাকে ।
১. ইন্টারভ্যাল মিনিল্যাপ টিউবেকটমি:
- প্রসবের ৬ সপ্তাহ পর
- স্বাভাবিক মাসিক চলাকালীন মাসিক চক্রের প্রথম ৭ দিনের মধ্যে
- অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য আধুনিক গর্ভনিরোধক পদ্ধতি সঠিক উপায়ে ও নিয়মিতভাবে ব্যবহার করা অবস্থায়
- শেষ মাসিকের পর হতে স্বামীর সাথে মিলিত হয়নি এমন অবস্থায়
- প্রসবের ৬ মাসের মধ্যে যদি শিশুকে বুকের দুধ পান করান এবং ঐ সময়ের মধ্যে যদি মাসিক না হয়ে থাকে (স্বাভাবিক প্রসবের ৭ম দিন হতে ৪২ দিন পর্যন্ত সময়কাল বাদে)
২. প্রসব–পরবর্তী টিউবেকটমি (Postpartum Tubectomy):
- যোনিপথে স্বাভাবিক প্রসবের ১০ ঘন্টা পর থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে । সন্তান প্রসবের পর ১০ ঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত, মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের অবস্থা দেখার জন্য।
- প্রসবের পর ৪৮ ঘন্টা হতে ৬ দিনের মধ্যে প্রসব পরবর্তী টিউবেকটমি করা যায় । এ সময়ে টিউবেকটমি করলে প্রোফাইলেকটিক এন্টিবায়োটিক দিতে হবে। তবে প্রসবের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে টিউবেকটমি সম্পাদন সবচেয়ে সুবিধাজনক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুসারে প্রসবের ৭ম দিন হতে ৪২ দিনের মধ্যে টিউবেকটমি করা যাবে না ।
- সিজারিয়ান অপারেশনের সাথে।
৩. এমআর/ গর্ভপাতের পর:
- এম আর করার ৭দিনের মধ্যে
- জটিলতাবিহীন গর্ভপাতের ৭ দিনের মধ্যে
টিউবেকটমির সম্ভাব্য পার্শ্ব–প্রতিক্রিয়া:
- অপারেশনের জায়গা ফোলা, ব্যথা হতে পারে।
- তবে টিউবেকটমির পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ততটা ক্ষতিকর নয় এবং ৭ দিনের মধ্যেই সাধারণত ভাল হয়ে যায়।
টিউবেকটমির সম্ভাব্য জটিলতা:
- অপারেশনের স্থানে বা তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা।
- অপারেশনের জায়গায় পুঁজ বা রক্ত আসা ।
- শরীরে ১০১ ডিগ্রী ফারেনহাইটের বেশি তাপমাত্রা ।
ফলোআপ ভিজিট:
- টিউবেকটমি অপারেশনের ৭-১০ দিন পর সেলাই কাটার জন্য সেবা কেন্দ্রে যেতে হবে।
- প্রয়োজন হলে ফলোআপ ভিজিটে যেতে হবে।