ইমপ্ল্যান্ট
ইমপ্ল্যান্ট কি ?
ইমপ্ল্যান্ট শুধুমাত্র প্রজেস্টোরেন হরমোন সমৃদ্ধ অস্থায়ী দীর্ঘমেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, যা মহিলাদের বাহুতে চামড়ার নিচে স্থাপন করা হয় । প্রকারভেদে ৩-৫ বছর মেয়াদি এই পদ্ধতির কার্যকারিতার সময় নির্ভর করে এর রডের সংখ্যা এবং হরমোনের ধরনের উপর । ইমপ্ল্যান্ট প্লাস্টিক বা সিলিকন রাবারের তৈরি এক বা একাধিক ক্যাপসুল বিশিষ্ট ডিভাইস, যার ভিতরে কৃত্রিম প্রজেস্টোরেন হরমোন থাকে । চামড়ার নিচে স্থাপনের পরপর ক্যাপসুলের গায়ের অসংখ্য অনুবীক্ষণিক ছিদ্র দিয়ে নির্দিষ্ট মাত্রায় হরমোন নিঃসৃত হতে থাকে ।
বিভিন্ন প্রকার ইমপ্ল্যান্ট
ইমপ্ল্যানন-এটি এক রড বিশিষ্ট ৩ বছর মেয়াদি ইমপ্ল্যান্ট । ইমপ্ল্যাননে ৬৮ মিলিগ্রাম ইটোনজেস্ট্রিল ইথিনিল-ভিনাইল এ্যাসিটেট এর একটি পলিমার ক্যাপসুলের ভিতর থাকে । এটি একবার ব্যবহার উপযোগী একটি জীবাণুমুক্ত এপ্লিকেটরে প্রি-লোডেড অবস্থায় থাকে ।
জ্যাডেল- জ্যাডেল দুই রড বিশিষ্ট ৫ বছর মেয়াদি ইমপ্ল্যান্ট । জ্যাডেল’র দুটি রডের প্রতিটিতে ৭৫ মিলিগ্রাম করে মোট ১৫০ মিলিগ্রাম লেভোনরজেস্ট্রিল থাকে । জ্যাডেলের দুটি সিলিকন ক্যাপসুল (সাইলাস্টিক টিউব) ও ট্রকার জীবাণুমুক্ত একটি প্যাকেটে থাকে ।
সাইনো ইমপ্ল্যান্ট-II- এটি দুই রড বিশিষ্ট ৪ বছর মেয়াদি ইমপ্ল্যান্ট । এর দুটি রডে ৭৫ মিলিগ্রাম করে মোট ১৫০ মিলিগ্রাম লেভোনরজেস্ট্রিল থাকে, যা সিলিকন ইলাসটোমেরিক আবরণের ভিতর থাকে । ২০১০ সালে NTC বাংলাদেশে সাইনো ইমপ্ল্যান্ট-II এর গ্রহণযোগ্যতা ট্রায়ালের অনুমোদন দেয় এবং ২০১১ সালের জুন মাস থেকে এই ট্রায়াল চলছে ।
ইমপ্ল্যান্ট কিভাবে কাজ করে
- ডিম্বস্ফুটন রোধ করে । ইমপ্ল্যানন পুরো ৩/৫ বছরই সম্পূর্ণরূপে ডিম্বস্ফুটন রোধ করে ।
- সারভিক্সের নিঃসরণের বা শ্লেষ্মার ঘনত্ব বাড়ায় ।
- এন্ডোমেট্রিয়াম এর পুরুত্ব কমিয়ে দেয় ।
ইমপ্ল্যান্ট কাদের জন্য উপযোগী
- নবদম্পতি।
- যারা দীর্ঘদিনের জন্য জন্মবিরতি চান।
- যারা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান।
- যারা ইস্টোজেন সমৃদ্ধ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন না।
ইমপ্ল্যান্ট–এর সুবিধা
- খুবই কার্যকর ।
- দীর্ঘমেয়াদি ।
- খুলে ফেলার প্রায় সাথে সাথেই গর্ভধারণ ক্ষমতা ফিরে আসে।
- নবদম্পতিরাও ব্যবহার করতে পারেন ।
- যৌনইচ্ছা বা যৌনমিলনে বাধার সৃষ্টি করে না ।
- প্রসব পরবর্তী মা যারা সন্তানকে বুকের দুধ পান করাচ্ছেন তারা সন্তানের বয়স ৬ সপ্তাহ পর থেকেই এটি ব্যবহার করা যায় ।
- যারা ইস্ট্রোজেন সমৃদ্ধ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন না তাদের জন্য এটা একটি উপযুক্ত পদ্ধতি ।
ইমপ্ল্যান্ট–এর অসুবিধা
- মাসিকের স্রাবের ধরন পরিবর্তন করে।
- প্রজেস্টরেন হরমোনে সংবেদনশীল এমন মহিলা এটি ব্যবহার করতে পারেন না ।
- কখনো কখনো বাইরে থেকে বোঝা যায় ।
- পরতে ও খুলতে হলে সেবাদান কেন্দ্রে যেতে হয় ।
ইমপ্ল্যান্ট নেয়ার/ব্যবহারের উপযুক্ত সময়
- মাসিকের ১-৫ দিনের মধ্যে ।
- মিশ্র খাবার বড়ি গ্রহীতার ক্ষেত্রে –
- সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হল শেষ খাবার বড়ি (সাদাবড়ি) খাওয়ার পরদিন ।
- এছাড়া সবগুলো বড়ি (আয়রন সহ)খাওয়া শেষ হলে তার পরদিন ।
- অন্য কোনো প্রজেস্টরেন হরমোন ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে –
- মিনিপিল বাদ দেয়ার দিন ।
- ইমপ্ল্যান্ট খোলার দিন ।
- ইনজেকটেবলস এর মেয়াদ কার্যকর থাকা অবস্থায় ।
- প্রসব পরবর্তী সময়ে–
- প্রসবের পর থেকে যেকোন সময়ে যদি নিশ্চিত হওয়া যায় গর্ভবতী নন।
- মা বুকের দুধ খাওয়ালে ৬ সপ্তাহ পরে।
- মা বুকের দুধ না খাওয়ালে প্রসবের সাথে সাথে।
- গর্ভপাত হলে বা এমআর (MR)-এর পর পরই।
- গর্ভ নেই তা নিশ্চিত হলে যে কোনো সময়ে।
ইমপ্ল্যান্ট স্থাপনের পর অনুসরণ (ফলো–আপ)
নিয়মিত ফলো-আপের জন্য ইমপ্ল্যান্ট নেয়ার এক বছরের মধ্যে মোট ৩ বার ক্লিনিকে আসতে হবে-
- ১ম ফলো-আপঃ স্থাপনের ১ মাস পর ± ৭ দিন ।
- ২য় ফলো-আপঃ স্থাপনের ৬ মাস পর ± ১ মাস ।
- ৩য় ফলো-আপঃ স্থাপনের ১২ মাস পর ± ১ মাস ।
- এছাড়াও জরুরি অবস্থা দেখা দিলে যে কোনো সময় ক্লিনিকে আসার পরামর্শ দেয়া হয় ।
যে সমস্ত কারণে সেবাকেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে–
- মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে ।
- ইমপ্ল্যান্ট রড স্থাপনের জায়গায় সংক্রমণ হলে ।
- তলপেতে প্রচন্ড ব্যথা হলে ।
- ইমপ্ল্যান্টের কোনো রড বের হয়ে আসলে ।
- অতিরিক্ত রক্তস্রাব হলে ।
- প্রচন্ড মাথা ব্যথা হলে বা চোখে ঝাপসা দেখলে ।
ইমপ্ল্যান্টের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও করণীয়
- দুই মাসিকের মধ্যবর্তী সময়ে ফোঁটা ফোঁটা রক্তস্রাব হতে পারে ।
- বেশিদিন ধরে অল্প অল্প রক্তক্ষরণ বা অতিরিক্ত রক্তস্রাব । এই সম্যসাটির হার খুবই কম এবং প্রথম কয়েকমাস পর এমনিতেই ভাল হয়ে যায় ।
- মাসিক বন্ধ থাকতে পারে (কিছু কিছু মহিলা এটিকে সুবিধা হিসেবে গণ্য করেন)
- মাথাধরা, বমি বমি ভাব, ওজন বৃদ্ধি পাওয়া বা কমে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে ।
- অবসাদ দেখা দিতে পারে ।
- স্তনে ব্যথা বা ভারী লাগা বোধ হতে পারে।
- তলপেটে ব্যথা হতে পারে (পদ্ধতির সাথে সম্পর্কিত হতেও পারে বা নাও হতে পারে)।
উল্লেখিত সম্ভাব্য জটিলতার যে কোনোএকটি দেখা দিলেই হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হবে।